Thursday, September 28, 2017

আইনের শাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার?


আমীন আল রশীদ
সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী; সংবিধানের এই ২৭ অনুচ্ছেদ মানলে এবং এর বাস্তবায়ন হলে আইনের শাসন নিয়ে আর কোনো আলোচনা বা বিতর্কের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু শাসনতন্ত্রে এবং রাষ্ট্রপরিচালনায় আমাদের সবচেয়ে বেশি কথাবার্তা বলতে হয় এই আইনের শাসন প্রশ্নেই।

বুদ্ধিজীবিতার সংকট


আমীন আল রশীদ
আহমদ ছফা লিখেছেন, একজন বুদ্ধিজীবীকে চিন্তা করতে হয়। কিন্তু চিন্তার বদলে তিনি যদি চিন্তা করার ভান করেন পরিণতি ভয়ংকর হতে বাধ্য।

উন্নয়ন সাংবাদিকতা মানেই আলু-পটলের বাম্পার ফলন নয়


আমীন আল রশীদ
হালে ‘উন্নয়ন’ শব্দটি আমাদের যাপিত জীবন, বিশেষ করে রাজনীতিতে এত বেশি ব্যবহৃত এবং উচ্চারিত যে, অনেক সময় শব্দটি নিয়ে নানাবিধ মশকরাও হয়। কখনও ‘উন্নয়ন সাংবাদিকতা’ শব্দটি নিয়ে রসিকতা বা উপহাসও চলে। যেমন বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন দেশের গণমাধ্যমের ওপর সুস্পষ্ট সেন্সরশিপ ছিল এবং তৎকালীন সেনানিয়ন্ত্রিত সরকারের প্রেসক্রিপশনে বহু রাজনীতিবিদের কথিত জবানবন্দিও অধিকাংশ গণমাধ্যম ছাপতে বাধ্য হয়েছিল, ওই সময়ে আমরা রসিকতা করে সহকর্মীদের বলতাম, ‘সিরিয়াস রিপোর্টিং বাদ দিয়া উন্নয়ন সাংবাদিকতা করেন। যেমন সেলাই শিখে স্বাবলম্বী সাথী; মুন্সিগঞ্জে আলুর বাম্পার ফলন; নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করলো ব্রি ইত্যাদি।’ এখন প্রশ্ন হলো, এগুলোই কি উন্নয়ন সাংবাদিকতা?

বিকল্প গণমাধ্যমে দায়বদ্ধতার প্রশ্ন


আমীন আল রশীদ
সিলেটের শিশু রাজন হত্যা মামলার পুরো বিচারকাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১৭ কার্যদিবসে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।দেশের আদালতগুলোয় যেখানে প্রায় ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন, সেখানে মাত্র ১৭ দিনে এরকম একটি চাঞ্চল্যকর মামলার বিচারকাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে সামাজিক চাপের কারণে। আর এই চাপটি এসেছে বিকল্প গণমাধ্যম, আরও পরিস্কার করে বললে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে।

Wednesday, September 27, 2017

গণতন্ত্রের মাল ও সূচক


আমীন আল রশীদ
দুনিয়াটা নানারকম মালে ভরে গেছে; আর যেসব মাল উত্তর থেকে দক্ষিণ, পুব থেকে পশ্চিমে সবচেয়ে বেশি চলছে, তার মধ্যে এক নম্বর মাল হচ্ছে গণতন্ত্র;এর মতো আর কোনো মাল নেই; ধর্মকর্ম, হ্যামবার্গার, প্রেম, ফিশ এন্ড চিপস, কাম, কোকাকোলা, বিয়ার, প্রিন্সেস ডায়না আর রাবারও এত জনপ্রিয় নয়।

সংবাদপত্রের ভবিষ্যত


আমীন আল রশীদ
২৬ মার্চ বিবিসি অনলাইনের একটি খবরের শিরোনাম-কাগজে আর ছাপা হবে না দি ইন্ডিপেনডেন্ট। যেখানে লেখা হয়েছে, ব্রিটেনে ৩০ বছরের পুরনো ‌একটি সংবাদপত্র দি ইন্ডিপেনডেন্ট আজ তার সবশেষ প্রিন্ট সংস্করণ বাজারে ছেড়েছে।এখন থেকে এই পত্রিকাটি শুধু অনলাইনেই প্রকাশিত হবে।

জাহান্নামের বিজ্ঞাপন


আমীন আল রশীদ
বলা হয়, বিজ্ঞাপন এমন জিনিস যে,জাহান্নামের বিজ্ঞাপন দেখার পরও আপনার মনে হবে, আহা এখনই যদি জাহান্নামে যাওয়া যেত! তবে পজিটিভি বিজ্ঞাপনের চেয়ে নেগেটিভ বিজ্ঞাপন বা ব্র্যান্ডিংয়ের শক্তি বেশি। কোনো বই নিয়ে অতিমাত্রায় সমালোচনা হলে বা নিষিদ্ধ হলে সেটি কেনার জন্য পাঠকের যে কী দুর্নিবার আগ্রহ তৈরি হয়, সেই অভিজ্ঞতা আমার নিজেরই আছে। সালমান রুশদীর স্যাটানিক ভার্সেস নিষিদ্ধ হবার কারণেই তুমুল আলোচনায় আসে এবং বইটি কেনার জন্য আমি সুদূর ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় আসি। বইয়ের বড় বড় দোকানে না পেয়ে নীলক্ষেতের ভেতরে একটা দোকান থেকে বইটার একটা ফটোকপি ভার্সন পাই এবং সেটা বেশ চড়া দাম দিয়ে কিনি।বইটা নিষিদ্ধ না হলে আমার হয়তো কখনো পড়াই হত না।

কী আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে?


আমীন আল রশীদ
কোনো ব্যক্তি যদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদালত কর্তৃক মীমাংসিত মু্ক্তিযুদ্ধের বিষয়াবলী বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণা বা তাতে মদদ দেয়, তাহলে তার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা তিনি উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এ রকম বিধান রেখে প্রণয়ন করা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

বিচারপতির বিচার, আইনের শাসন ও বিবিধ তর্ক



আমীন আল রশীদ
রুল অব ল বা আইনের শাসনের সহজ অর্থই হলো আইনের দ্বারা শাসন। অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালিত হবে আইনের বিধিবিধান দ্বারা। কোনো ব্যক্তি, ব্যক্তিবর্গ, দল বা প্রশাসনের বিশেষ কোনো অংশের ইচ্ছা কিংবা বন্দুকের নল অথবা বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের পরামর্শে নয়।
আইনের শাসনের আরেকটি অর্থ আইন সবার জন্য সমান। একই অপরাধে একজন সাধারণ নাগরিকের যে শাস্তি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শাস্তিও তা-ই। এখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে তিনি খালাস পাবেন আর সাধারণ নাগরিক জেল খাটবে, এটি আইনের শাসন অনুমোদন করে না। একই কারণে যে বিচারক বা বিচারপতিরা অপরাধের বিচার করেন, তাঁরাও আইনের ঊর্ধ্বে নন। অর্থাৎ অন্যায় করলে তাঁদেরও বিচারের আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা প্রতিটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন প্রক্রিয়ায় বিচারকদের বিচার হবে? সাধারণ বিচারব্যবস্থায় যদি বিচারকদের বিচার করা হয়, সেটি বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণœ করে কি না?

ষোড়শ সংশোধনীর রায়: পলিটিক্যাল স্টান্টবাজি?



আমীন আল রশীদ

বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতার প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যরা ভেবেছিলেনবিচারকদের বিচার তারাই করবেন। সেই নিমিত্ত তারা সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বাহাত্তরের মূল সংবিধানের বিধান ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত সেই সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন।

বাহাত্তরের সংবিধান ও মৌলিক কাঠামোর তর্ক




আমীন আল রশীদ
বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতার প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন,বিচারকদের বিচারের ভার তাদের হাতেই থাকবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাহাত্তরে যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, সেখানেই এই বিধান ছিল। কিন্তু মাঝখানে বহু বছর সেই ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে চলে যায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে। ষোড়শ সংশোধনী এনে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বাহাত্তরের মূল সংবিধানের সেই বিধান ফিরিয়ে আনা হলেও সর্বোচ্চ আদালত সেই সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন।