‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই
জনতা’র প্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যরা ভেবেছিলেন, বিচারকদের বিচার তারাই করবেন। সেই নিমিত্ত তারা সংবিধানের
৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বাহাত্তরের মূল সংবিধানের বিধান ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু
সর্বোচ্চ আদালত সেই সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন।
যে
পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে
বিচারকদের বিচারের ভার সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ন্যস্ত
করেছিলেন, সেই পঞ্চম সংশোধনী উচ্চ
আদালত বাতিল করলেও ৯৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করেননি। যেমন বাতিল করা হয়নি ওই সংশোধনীর
সময়ে অন্তর্ভুক্ত সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহ’।
১৯৮৯
সালে আপিল বিভাগ এক রায়ে আরেক সামরিক শাসক এরশাদের সময়ে করা অষ্টম সংশোধনীতে
অন্তর্ভুক্ত হাইকোর্ট বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলো সংবিধানবিরোধী
তথা বাতিল বলে ঘোষণা করলেও ওই সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণাসহ অন্যান্য সংশোধনীগুলো বহাল রাখেন।
১৯৭২
সালের ৪ নভেম্বর গৃহীত হবার পর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে এ যাবত ১৬ বার সংশোধনী
আনা হয়েছে এবং এর মধ্যে পাঁচটি সংশোধনী (পুরো/আংশিক) বাতিল করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে
পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টমের একাংশ, ত্রয়োদশ পুরোটা এবং ষোড়শের পুরো সংশোধনী।
বাহাত্তরের
মূল সংবিধানে বিচারকদের অপসারণ সম্পর্কিত ৯৬ অনুচ্ছেদে বিধান ছিল, কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ বা অসামর্থের প্রমাণ পেলে এবং
সংসদের মোট সদস্যের অন্যূন দুই তৃতীয়াংশ সদস্য ভোট দিলে রাষ্ট্রপতির আদেশে ওই
বিচারককে অপাসরণ করা যাবে। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়াউর রহমান এই
অনুচ্ছেদ বদলে দেন এবং বিচারকদের অপসারণের ভার ন্যস্ত করেন সুপ্রিম জুডিশিয়াল
কাউন্সিলের উপর।
সংবিধানের
অভিভাবক হিসেবে উচ্চ আদালত তার এখতিয়ার বলে সংবিধানের যেকোনো সংশোধনী বা আইন বাতিল
করতে পারেন। আবার পঞ্চদশ সংশোধনীর সময় একটি অনুচ্ছেদ (৭ এর খ) যুক্ত করে সেখানে
বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে
যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয়
ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক
কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধন করা যাবে না। অর্থাৎ
আগে যেমন সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার বা মৌলিক কাঠামো কী এবং সেগুলো সংশোধন করা
যাবে কি না এ নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ছিল, পঞ্চদশ সংশোধনীতে সেটি
পরিস্কার করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ভবিষ্যতে কোনো সরকার যদি
তার দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধানের এই বিধানটি (৭ এর খ) বাতিল করে
তখন কী হবে?
ক্ষমতার
প্রশ্নে প্রায়শই সরকার (সংসদ ও নির্বাহী বিভাগ) ও বিচার বিভাগের মধ্যে একটা
টানাপড়েন লক্ষ্য করা যায়। যেমন আদালতের এখতিয়ারের সমালোচনা এসেছে খোদ সরকার প্রধানের
তরফেই। গত ১৫ এপ্রিল রাজধানীর কাকরাইলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র
কুমার সিনহার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন একটি আইন প্রণয়ন করি, তখন এই আইনটা দীর্ঘ পথ পরিক্রম করে আসে। আমরা হঠাৎ করে
পার্লামেন্টে আইন কিন্তু পাস করি না। কোনো আইন করাই হয় কোনো না কোনো জনগণের
স্বার্থে। সেই আইন যদি দেখি দুজন বসে নাকচ করে দিলেন, তারপর আর কিছুই করার থাকল না। তাহলে, এতদিন ধরে খাটাখাটুনি সব ব্যর্থ হয়ে যায়।’
যদিও
প্রধান বিচারপতির শক্ত অবস্থান, ‘জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো
বিধান বা আইন করা হলে তা বাতিল করতে সুপ্রিম কোর্ট পিছপা হবে না। সংসদের তিনশ' সংসদ সদস্য মিলেও যদি সংবিধান পরিপন্থি কোনো আইন বা সংশোধনী
করেন, তাহলেও তা বাতিল করা হবে। সংবিধানই সুপ্রিম
কোর্টকে এ ক্ষমতা দিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুলাই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সম্পর্কিত
হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ। এতে হতাশা প্রকাশ করে
অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল ৭২ এর আদিসংবিধানে ফেরা। কিন্তু এই রায়ের
মধ্যে দিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। এজন্য আমরা দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করছি।
বস্তুত
কথায় কথায় এই বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি একধরনের পলিটিক্যাল
স্টান্টবাজি। কেননা, বাহাত্তরের সংবিধানে
বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রধর্ম ছিল না। বিসমিল্লাহ অন্তর্ভু্ক্ত করেছেন সামরিক শাসক
জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন
আরেক সামরিক শাসক এরশাদ, অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে। এ
দুটি ক্ষেত্রেই বাহাত্তরের সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি
ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনায় আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু যারা পঞ্চদশ এবং ষোড়শ সংশোধনীর
মাধ্যমে দেশ বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে গেছে বলে দাবি করেন, তারাও এই ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে নারাজ। অথচ তারা
বাহাত্তরের মূল সংবিধানের আলোকে ৯৬ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনতে চান। তার চেয়ে বড় কথা, বাহাত্তরের সংবিধান যেমন ছিল, ২০১৭ সালে সংবিধানের চেহারা তেমনই থাকতে হবে, এর কী যুক্তি আছে?
(২)
স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে যে, ষোড়শ
সংশোধনী বাতিলের ফলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে
ন্যস্ত হয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পরে
যতক্ষণ না সংবিধানে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, অর্থাৎ যতক্ষণ না ৯৬ অনুচ্ছেদকে
আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার বিধানটি যুক্ত করে নতুন করে সংবিধান ছাপানো হচ্ছে,
ততক্ষণ অবধি একটা সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করবে।প্রশ্নটা উঠছে এ কারণে যে,
চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রপতিশাসিত
সরকারব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনীর ফলে চতুর্থ সংশোধনী বাতিল
হয়ে যায়। এর বহু বছর পরে যখন সর্বোচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন, তখন
কি দেশ পঞ্চম সংশোধনীর আগের অবস্থায় অর্থাৎ একদলীয় শাসনব্যবস্থায় ফিরে গিয়েছিল? তা
হয়নি। সুতরাং ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ফলে এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংবিধান
পুনর্মূদ্রন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ
বিষয়ে সন্দেহ কম যে, ষোড়শ সংশোধনীর মূলে রয়েছে বিচার বিভাগের ওপর সরকারের কর্তৃত্ব
বজায় রাখা। কেননা, এই সংশোধনী আনার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার এ বিষয়ে একটি আইন
প্রণয়নে উদ্যোগী হয়। সব সরকারই চায় বিচার বিভাগের ওপর তার কর্তৃত্ব বজায় থাকুক
যাতে সে বিরোধী ও ভিন্নমত দমনে আদালতকে কাজে লাগাতে পারে। ত্রয়োদশ সংশোধনী
বাতিল .হলেও সেখানে আরও দুটি টার্ম নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের
দিক-নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সরকার সেই নির্দেশনা মানেনি। বরং সরাসরি ওই রায়ের আলোকে
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় যাতে নির্বাচনে একক
নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা যায়। এসব কারণে বিচার বিভাগও সব সময় চায় সরকারের কর্তৃত্বে
লাগাম টেনে ধরতে। যে কারণে মাঝেমধ্যেই সরকারের সাথে বিচার বিভাগের একটা মুখোমুখি
অবস্থান তৈরি হয়, যার অনেকগুলো উদাহরণ
এরইমধ্যে আমাদের সামনে দৃশ্যমান হয়েছে।
ষোড়শ
সংশোধনী বাতিলের পরপরই যেমন সরকার বিচারকদের অপসারণ সম্পর্কিত আইনের খসড়া প্রস্তুত
করে ফেলে, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের
পরে সরকারের সেরকম উদ্যোগ বা তৎপরতা দেখা যায়নি। বরং নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো
কেমন হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে
নানারকম মত থাকলেও এ নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা জিইয়ে রাখা হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন
সামনে রেখে এই তর্ক আরও ঘনীভূত হবে বলে ধারণা করা যায়।
প্রশ্ন
হলো সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে কেন এত বিতর্ক? পাঠকের স্মরণ থাকতে পারে, ২০১২ সালে সড়ক ভবনকে কেন্দ্র করে আদালত একটি রায় দেন, যা নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় এবং এ বিষয়ে তৎকালীন স্পিকার এবং
বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একটি রুলিং দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের
তৎকালীন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী স্পিকারের ওই বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহ
বলে মন্তব্য করেন। এরপরই ওই বিচারকের অপসারণের দাবি ওঠে সংসদে। এ সময় সংসদ সদস্যরা
বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা বাহাত্তরের মূল সংবিধানের আলোকে সংসদের কাছে ফিরিয়ে
আনার দাবি জানান। এর দুই বছর পরে পাস হয় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী যেখানে বিচারকদের
অপসারণ-সম্পর্কিত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা
সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
আইনপ্রণেতাদের
যুক্তি, তারা যেখানে খোদ রাষ্ট্রপতিকেই অভিশংসিত
করতে পারেন, সেখানে বিচারকদের কেন নয়? পৃথিবীর অনেক দেশেই বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের ওপর
ন্যস্ত, এ কথা ঠিক। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমাদের
আইনপ্রণেতা বা সংসদ সদস্যদের যোগ্যতা কী? সাড়ে তিনশো এমপির
মধ্যে একটা বড় অংশই যেখানে শিক্ষিত নন, আইন-কানুন ভালো বোঝেন না
তারা কী করে একজন বিচারকের অপসারণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন?
আমাদের
রাষ্ট্রপতিগণ শপথ নেয়ার পরে দলীয় পরিচয় বহন না করলেও তাদের পক্ষে দলের বৃত্তের
বাইরে থাকা কঠিন। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির খুব বেশি ক্ষমতা না থাকলেও জাতির
বিভিন্ন সংকটকালে তাকে যেমন নিরপেক্ষ থাকতে হয়, তেমনটি আমরা সচরাচর দেখি
না। যেমন এই সংকটে রাষ্ট্রপতিসুলভ আচরণে ব্যর্থ হয়েছিলেন ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। আবার
দলের অপছন্দের কাজ করে রাষ্ট্রপতির পদ খুইয়েছিলেন সাবেক বিএনপি নেতা ডাক্তার বি.
চৌধুরী। সুতরাং রাষ্ট্রপতির ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন আর বিচারকদের অপসারণ যে এক
জিনিস নয়, তা পরিস্কার।
আমাদের
দেশে কারা আইনপ্রণেতা হন এবং তাঁদের কী যোগ্যতা, তা নিয়ে প্রশ্ন বহুদিনের। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার
সিনহা এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জাতীয় সংসদে
আলোচনা-পর্যালোচনা না হওয়ায় প্রতিটি আইনই ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ রয়ে যাচ্ছে।
সংসদ সদস্যদের আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি
বলেন, এর আগে সংসদে আইনের ওপর ব্যাপক আলোচনা-বিতর্ক
হতো। কিন্তু এখন তা হয় না। ফলে আইনসভায় আইনের চর্চা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
জনগণ ভোগান্তিতে পড়ে। বিচার বিভাগেও চাপ পড়ে। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক
সংগঠন টিআইবি তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিল, আইন প্রণয়নে সংসদ সদস্যরা
কেবল ‘হ্যাঁ’ ‘না’ বলেন। আইন প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় তাঁদের কার্যকর অংশগ্রহণ নেই।
কারা
আইনপ্রণেতা হবেন, কী তাঁদের যোগ্যতা থাকতে
হবে, তার কোনো নির্দেশনা সংবিধানেও নেই। বরং ২৫
বছর বয়সী বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক (কিছু ব্যতিক্রম বাদে) সংসদ সদস্য নির্বাচিত
হতে পারেন। অথচ আইন প্রণয়নপ্রক্রিয়াটি খুবই জটিল এবং এখানে যথেষ্ট পড়াশোনার বিষয়
থাকে। কিন্তু একজন আধাশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত লোকও সংসদ সদস্য হয়ে যাচ্ছেন এবং তখন
বাস্তবিক কারণেই আমলারা যে বিলের খসড়া তৈরি করে দেন, তাতে সংসদ সদস্যদের ‘হ্যাঁ’ ‘না’ বলা ছাড়া কিছু করার থাকে না। কারণ, একটি বিলের ত্রুটিবিচ্যুতি ধরার জন্য ন্যূনতম যে পড়াশোনা ও
যোগ্যতা থাকা দরকার, সেটি ছাড়াও সংসদ সদস্য
হওয়া যাচ্ছে।
এটি
ঠিক, আইন বিভাগ (সংসদ) ও বিচার বিভাগ কেউ কারও
প্রতিপক্ষ নয়; বরং পরিপূরক। সংসদে প্রণীত
আইনের দ্বারা যেমন আদালত পরিচালিত হন, তেমনি কোনো আইন সংবিধানের
সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে সেটি বাতিলের ক্ষমতাও আছে আদালতের। সংবিধানের ব্যাখ্যা করার
চূড়ান্ত এখতিয়ারও উচ্চ আদালতের। সুতরাং একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্স বা ভারসাম্য
বরাবরই ছিল এবং বিচারকদের অপসারণ-সম্পর্কিত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ফলে সেই ভারসাম্য
নষ্ট হবে না বলেই দেশের মানুষ বিশ্বাস করে। সেইসাথে সংবিধানের মতো স্পর্শকাতর বিষয়
নিয়ে পলিটিক্যাল স্টান্টবাজি বা রাজনৈতিক চাতুরি না করাও দেশের জন্য মঙ্গলজনক।
আমীন
আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক।
No comments:
Post a Comment